জলে দোলে আকাশ । আফজাল হোসেন
অভাবী বিশিষ্টদের মনে কত সুখ- তাদের কপাল চওড়া করে দিয়েছে শহরজুড়ে থাকা ফুটপাতগুলো। মানুষের হাঁটাচলার পথ বেঁচেও অভাবী বিশিষ্টদের ভালো আয় উপার্জন হয়।
অভাবী এবং বিশিষ্ট কারা! যাদের অনেক আছে, এদিক ওদিক থেকে বহু পায়। সম্পদের শেষ নেই কিন্তু রাস্তার ধুলো বেঁচেও যদি ধন মেলে- তা ই সই। দিগন্তরেখার মতো অসীম অভাব মনে, সে অভাব ঘোঁচেনা কিছুতেই।
এরা উঠতে বসতে সালাম পায় অনুসারীদের, গালি খায় সাধারণের। রক্ষে, সে গালি ঢোঁড়া সাপের ছোবলের মতো- ফোঁস আছে বিষ নেই।
সাধারণ খুবই উপায়হীন অসহায়। তাদের হাঁটাচলার পথ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলছেই। রোজ বিচার বোধহীন, রীতিনীতি না মানা মানুষদের অত্যাচার সগৌরবে চলে শহরজুড়ে।
ফুটপাতের উপর রিক্সা দৌঁড়ায়। তাড়ায় থাকা সাইকেল, মোটরসাইকেল বা রিক্সাভ্যান উঠিয়ে দিয়ে চলে, চলছে যা খুশী তাই অসভ্যতা। এই মুর্খতা, অসভ্যতা, অনধিকার চর্চ্চা ক্রমে যেনো শরমের বদলে আনন্দময় অধিকার হয়ে উঠেছে।
যারা মানুষের হাঁটাচলার পথের উপর উঠে পড়ে বিঘ্ন ঘটায়, তারা থাকে নির্বিকার- কারও জন্য কোনও প্রকার অসুবিধা সৃষ্টি করছে বলে মনে করেনা।
রোজ হাঁটু কনুই বা মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেলের নানাপ্রকার গুঁতোগাতা খেয়েও মাথা ঠিক রাখতে হয় হতভাগা পথচারীদের। পায়ের উপর চাকা তুলে দেয় রিক্সা বা মাল বোঝাই রিক্সাভ্যান- দুপায়ের মাঝখানে চাকাও ঢুকে যায়। যা ই ঘটুক চোয়াল শক্ত করে সব সয়ে নিতে হবে।
আপত্তি বা প্রতিবাদ করলে, হবে বেয়াদবী, অন্যায় এবং অসভ্যতা। ঝাঁঝালো গলায় শুনিয়ে দেবে, হাঁটা পথে অমন একটু আধটু হইতেই পারে- মাইনা না নিতে পারলে নাইমেননা রাস্তায়।
যারা শিক্ষা দীক্ষায় নমনীয়, ভদ্রলোক এবং দায়িত্বশীল- বিপদ তাদেরই।উচিৎ অনুচিৎ, নিয়ম অনিয়ম মেনে চলতে চায় যারা- পদে পদে তাঁদেরই খেতে হয় হোঁচট, হতে হয় অপমানিত।
কষ্ট দুঃখ, হতাশা- নীরবে রোজ শত অপমান হজম করে চলেছে সাধারণ। তাঁরা সাধারণ, তাই স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছে- এদেশে, এশহরে তাঁদের মূল পরিচয়- ঘোড়ার ডিম। অতএব মাথা ঠান্ডা রাখো আর ধৈর্যের গোড়ায় পানি ঢেলে টিকে থাকো। তেমনই আছে সোনার ডিম দেয়া শহরে, দেশে ঘোড়ার ডিমেরা।
লেখক- নাট্য অভিনেতা ও নির্মাতা
(২৪মে,২০২২ তারিখে প্রকাশিত লেখকের টাইমলাইন থেকে সংগৃহীত)
দৃ:আ:/জ:নি/২৪মে,২০২২
পাঠকের মন্তব্য