রাজনীতি সংযোগ । মো: শফিকুল হক শুভ
অনড় অবস্থান ত্যাগ করে তাদেরকে রাজনৈতিক কৌশলী হতে হবে, রাজনৈতিক মেরুকরণের বিষয়ে সুক্ষ জ্ঞানবুদ্ধি অর্জন করতে হবে, আবেগ নয় বিবেগ দিয়ে অনুধাবন করতে হবে, কথা নয় কাজে প্রমাণ করতে হবে, তাদেরকে এও জানতে হবে কুটনৈতিক জ্ঞান একটি বিশাল সমুদ্রের মত ; এখানে গোটা দুয়েক খাল কেটে সেন্টু গেঞ্জিতে ছবি তোলে এই বিশাল জ্ঞানের দশমিক এক অংশও জানা যায়না। বিগত পনের বছরের আওয়ামী শাসন আমলকে গভীর মনযোগে পর্যালোচনা না করে কুয়োর ব্যাঙ এর মত নিজেদেরকেই সবজান্তা মনে করলে কেয়ারটেকার কেয়ারটেকার করতে করতেই দিন ফুরিয়ে যাবে, গেছেও তাই। এখন চলছে হাহাকার ! আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের ভাষায় জ্বালা জ্বালা অন্তর জ্বালা !! যেহেতু গত পনের বছরেও তারা রাজনীতির শাপলুডু খেলাটিই শিখতে পারলোনা তাই তারা এবার শুধুই বাউছ বাউছ খেলা খেলুক আর বলুক এলোনচি বেলুনচি- হাপ্পাআ—
কিছুই করার নেই, একেবারে শেষ সময়ে অবস্থান এখন, আর দুটি মাস পরেই ভোট; তাই অন্যকোনো ভাবনা ভেবেও লাভ নেই এখন। যদি ভাবে তবে উভয়কুল যাবে; আর ঠিকটা ভাবলে একটি কুল হলেও থাকবে অর্থাৎ বিরুধী আসনে হয়ত বসতে পারবে । তাই এদিক ওদিক কোনো ভাবনা না ভেবে শেখ হাসিনার অধীনেই তাদেরকে কোনো উপায় খুঁজতে হবে এবং নির্বাচনে আসতেই হবে। নয়ত এবারের নির্বাচনের পরে জনগণ থেকে বিএনপি পারমানেন্ট লগ আউট হয়ে যাবে আর আওয়ামী লীগ থেকে হবে গেট আউট। অর্থাৎ বক্তব্যে বিএনপি বিষয়ক আলোচনা করে এদেশের মানুষ আর মুল্যবান সময় নষ্ট করবেনা, এমনকি শেখ হাসিনাও না।
বিএনপি বলছে ‘নির্বাচন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের বক্তব্যকে ধর্তব্যেই’ আনতে রাজী নয় তারা। দলটির মূখপাত্র বলছেন ‘সরকারের চাওয়া-না চাওয়ার গুরুত্ব এখন আর নেই’ বরং ‘গ্রহণযোগ্য নির্বাচন’ ছাড়া আর কিছুই তারা গ্রহণ করবেন না। এখন যদি তাকেই প্রশ্ন করি তাহলে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিটা কে ? যিনি সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য হবেন। তিনি এর উত্তরও দিতে পারবেননা আর দিলেও বিএনপি পন্থী কারও নাম বলবেন যা আবার আওয়ামী লীগের কাছে গ্রহণযোগ্য হবেনা। বিএনপি নেতারা প্রায়শই বলছেন সরকার সহজভাবে দাবি না মানলে ‘ফয়সালা হবে রাজপথেই’। অর্থাৎ আন্দোলনের মাধ্যমেই তারা সরকারকে বাধ্য করতে চান। কিন্তু আওয়ামী লীগও পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেছে রাজপথে তারাও ছেড়ে কথা বলবেন না। যদিও উভয়পক্ষের এমন বাহাসের বাইরেও অনেকের চোখ আছে- আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্ব কী পদক্ষেপ নেয় তার উপড়।
আজ যে আন্দোলন বিএনপি করছে সেই আন্দোলন যদি আওয়ামী লীগের হাতে চলে যায় তাহলে ধকলের গ্যারাকল সামলাতে কেমন লাগে তা বিএনপির জানা আছে ওয়ানইলিভেন থেকেই, বোধকরি আরও অনেক আগে থেকেই। তাই শুধু সাধারণ জনগণই নয় বরং স্বয়ং বিএনপিও চুপিচুপি চায় ’’আওয়ামী লীগ আন্দোলনে নয় বরং ক্ষমতায় থাক, সেই ভালো। প্রমাণ স্বরুপ: কাদের ভাই যখন প্রশ্ন তুলেন- ”খেলা হবে ? তখন তারা এর কোনো সদুত্তর দেয়না কারন তারা খেলতে ও খেলাতে কোনোটাই জানেনা । জানে শুধু লুটপাট করতে। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কোনো জলেভাসা পদ্ম নয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশরই অপর নাম; যেমন: কংগ্রেস ও ভারত। অন্যদিকে বিএনপি বা জাতীয় পার্টি যাই বলুন না কেন তারা এক কথায় সামরিক শাসক, তারা কখনই জনগণের একান্ত প্রতিনিধি নয়। তারা নিজেদের স্বার্থ ছাড়া কখনই কিছু বুঝেনা। এছাড়া আরও যেসকল দল আছে তাদের বেশীরভাগই আওয়ামী লীগের নিম্ন উচ্ছিষ্টদের দ্বারা গঠিত, যাদেরকে সর্ব নিকৃষ্টমানের রাষ্ট্রবিরোধী বলা হয়।
সভ্য আন্তর্জাতিক মহল গভীর পর্যালোচনা করে দেখেছে যে, বাংলাদেশ ও পররাষ্ট্রনীতি উভয়ই শেখ হাসিনার কাছেই নিরাপদ আর অন্যদিকে অসভ্য আন্তর্জাতিক মহলের কাছে শেখ হাসিনা অনেকটাই নবাব সিরাজ উদ্দৌলা বা টিপু সুলতানের মত; যার জন্য তারা এই ভুখন্ডে আগের মত সুবিধা করতে পাচ্ছেনা। সেই মীর জাফর বা মীর সাদিকরাই আবার ফকরুল, তারেক বা ইউনুস রুপ ধারণ করে অসভ্য আন্তর্জাতিক মহলে ধন্যা দিয়ে যাচ্ছে যেনো আবারও দেশটি দু-চারশ বছরের জন্য পরাধীন হয়ে যায় আর তারা কথিত রাজা বনে যান।
শুধু শক্তির নয় চরিত্রেরও কোনো ক্ষয় হয়না, রুপান্তর হয় মাত্র। সেদিক বিবেচনায় মীর জাফরের রপান্তর হলো খন্দকার মুশতাক বা জিয়াউর রহমান আর তাদের রুপান্তর হলো যথাক্রমে নোবেল ইউনুস বা খাম্বা তারেক। তাই গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সভ্য আন্তর্জাতিক মহলে ধীরে হলেও দৃঢ় ভাবে আগাচ্ছেন আর অসভ্য আন্তর্জাতিক মহলকে সেলফিতে কুলফি বানিয়ে দুর দুর করে দৌড়াচ্ছেন। আর যাইহোক তাদের সাথে আমাদের আর যায়না ; এমনকি ১৫আগষ্ট ও ২১আগষ্টের ঘটনার পর বিএনপির সাথে আওয়ামী লীগেরও আর যায়না, যেতে পারেনা। কখনই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির আদর্শ এক হতে পারেনা। শুধু একই দেশের নাগরিক বিধায় দেখা হলে কথা বলতে হয় আর ধৈর্য্য আছে বিধায় সহ্যটাও করতে হয় কারন শেখ হাসিনা নীলকন্ঠী তাই।
দু-শো বছরের এমন নিকৃষ্ট উদাহরনের পরেও আমাদের কেনো এখনও শিক্ষা হয়না তা আমার বোধগম্য নয়। এদিক দিয়ে ভারত এগিয়ে আছে বলতেই হবে কারন তাদের মত দেশপ্রেম আমাদের নেই। আমরা বেশিরভাগই মুখে বলি ‘‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি আর জাতীয় দিবসগুলোতে ছুটির দিন পেয়ে ঘুমিয়ে থাকি, এমনকি অসভ্য আন্তর্জাতিক মহলকে সিক্রেট তথ্য উপাত্ত দিয়েও দেশের বারটা বাজিয়ে থাকি।
শেষকথা হচ্ছে আর দু-মাস পরেই জাতীয় নির্বাচন। এখন আর সরকার পতনের আন্দোলন করে কোনো লাভ নেই কারন যা আপনারা গত পনের বছরেও করতে পারেননি তা এই দুই মাসে আর পারবেননা, প্রশ্নই উঠেনা। অন্তত এবার আর নির্বাচন বর্জন নয় বরং নির্বাচনমুখী হওয়াটা আপনাদের জন্য অতীব জরুরী নয়ত ভেড়ায় ক্ষেত খেয়ে ফেলবে তখন লন্ডনে থেকে ভোগবিলাসত দুরে থাক; পয়:নিস্কাশন বা স্যানিটেশনেরও উপায় থাকবেনা। সময়টা এমন হবে যে, আকাশে পুকুর দেখবেন আর ভাববেন আকাশটাই মাছ চাষের উপযুক্ত জায়গা। ধন্যবাদ ।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয়তু শেখ হাসিনা।
লেখক পরিচিতি :
ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সম্মানিত সদস্য’’ শফিকুল হক শুভ ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মরহুম এ্যডভোকেট আজিজুল হক সাহেবের ভাতিজা । স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী রাজনীতির কিংবদন্তী প্রবর্তক রফিক উদ্দিন ভুঞা ছিলেন সেই কমিটির সভাপতি। জেলার আওয়ামী রাজনীতির ইতিহাসে আজও চীরভাস্বর হয়ে আছে রফিক আজিজ পরিষদ।
রা:স:/জ:নি:
পাঠকের মন্তব্য