সংযোগ খবর (আন্তর্জাতিক) । নোবেল শান্তি পুরস্কার,২০২৩
ইরানের নারী অধিকার কর্মী নার্গেস মোহাম্মদী এ বছর নোবেল শান্তি পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। নোবেল কমিটি জানিয়েছে, ইরানে নারীদের উপর যে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে তার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নার্গেস মোহাম্মদীকে শান্তি পুরষ্কার দেয়া হয়েছে। তিনি ইরানে মানবাধিকার রক্ষা এবং সবার স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মিথ্যা প্রচারণার অভিযোগে নার্গেস মোহাম্মদীকে বর্তমানে ইরানের কুখ্যাত এভিন কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। ২০১১ সাল থেকে তাকে বেশ কয়েক-দফা কারাদণ্ড দেয়া হয়। কারাগার থেকেই নোবেল জয়ের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নার্গিস। বলেছেন, এতে ইরানে সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলন আরও জোরদার হবে।
পুরষ্কার ঘোষণার সময় নোবেল কমিটি বলেছে, নার্গেস মোহাম্মদীর সাহসী ভূমিকার জন্য ব্যক্তিগত জীবনে তাকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। “সবমিলিয়ে ইরানের শাসক গোষ্ঠী তাকে ১৩ বার গ্রেফতার করেছে। এরমধ্যে তাকে পাঁচবার দোষী সাব্যস্ত করে সর্বমোট ৩১ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে,” বলেন নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির প্রধান বেরিট রেইস-এন্ডারসেন।
তিনি বলেন, “আমি যখন কথা বলছি তখনও তিনি কারাগারে।”এক বছর আগে ইরানের নারীরা যে বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন সে প্রেক্ষাপটে নার্গেস মোহাম্মদীকে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত করা হলো। ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে মাশা আমিনির মৃত্যুর পর সে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। নোবেল কমিটির প্রধান তার বক্তব্যে মাশা আমিনির কথাও উল্লেখ করেছেন। নার্গেস মোহাম্মদীকে শীঘ্রই মুক্তি দেয়া হবে বলে নোবেল কমিটি আশা করে, যাতে তিনি আগামী ডিসেম্বরে নোবেল পুরষ্কার প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন।
তবে নার্গেস মোহাম্মদীর নোবেল পুরষ্কার পাবার বিষয়টিকে সমালোচনা করেছে ইরানের একটি বার্তা সংস্থা। ইরানের ফার্স বার্তা সংস্থা বলছে, ‘জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য’ তাকে নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়েছে। বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়েছে, ৫১ বছর বয়সী নার্গেস মোহাম্মদী ‘পশ্চিমাদের কাছ থেকে পুরষ্কার’ পেয়েছে। “ জাতীয় নিরাপত্তা বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য সে একাধিকবার সংবাদ শিরোনাম হয়েছে,” ফার্স বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়।
জাতিসংঘ বলেছে, ক্রমাগত সহিংসতা, ভয়ভীতি দেখানো, হয়রানি এবং আটকের ঘটনার মধ্যে ইরানের নারীরা যে সাহসী ভূমিকা পালন করছে নোবেল পুরষ্কারের মাধ্যমে সেটির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হলো। গত বছর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ইউক্রেনের মানবাধিকার সংস্থা সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিস-এর প্রধান ওলেকসান্দ্রা মাটভিচুক নার্গেস মোহাম্মদীকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ইরানের জনগণ স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে। “আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে ইরানের জণগণের সাফল্যের উপর,” বলেন মিজ মাটভিচুক।
পুরষ্কার ঘোষণার পর নার্গেস মোহাম্মদীর পরিবার বলেছে ইরানের নারীরা স্বাধীনতার জন্য যে সংগ্রাম করছে তার একটি ঐতিহাসিক মূহূর্ত। কিন্তু এই অসাধারণ মূহূর্তটি নার্গেস মোহাম্মদী উদযাপন করতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করেছে তার পরিবার। বিবিসির কূটনৈতিক সংবাদদাতা ক্যারোলাইন হাওলি বলছেন, কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে নার্গেস মোহাম্মদী নোবেল পুরষ্কার গ্রহণ করার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ, বর্তমানে তিনি ইরানের এভিন কারাগারে ১০ বছরের সাজা ভোগ করছেন।
ইরানের অলাভজনক মানবাধিকার সংগঠন ডিফেন্ডার্স অব হিউম্যান রাইটস সেন্টারের ভাইস প্রেসিডেন্ট নার্গিস মোহাম্মদি। সংগঠনের প্রধান অর্থাৎ প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে রয়েছেন প্রতিষ্ঠাতা শিরিন এবাদি। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের জন্য ২০০৩ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান তিনি। শান্তিতে এ বছরের নোবেলজয়ীর নাম ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদপত্র নিউইয়র্ক টাইমসের পক্ষ থেকে নার্গিসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এ সময় তিনি বলেন, সম–অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই থেকে কখনো সরে আসবেন না, এমনকি এই কারণে যদি কারাভোগও করতে হয়। নার্গিস বলেন, ‘নারীর মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত (ইরানে) নিপীড়ক ধর্মীয় সরকারের অব্যাহত বৈষম্য, অত্যাচার ও লিঙ্গভিত্তিক (নারী হওয়ার কারণে) নিপীড়নের বিরুদ্ধে আমার এ লড়াই চালিয়ে যাব।’
নোবেল পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে নার্গিস বলেন, ‘আমি আশা করি, এই স্বীকৃতি পরিবর্তনের জন্য ইরানে আন্দোলনরত মানুষকে আরও সংগঠিত ও শক্তিশালী করে তুলবে। বিজয় সন্নিকটে।’
নোবেল পুরষ্কার এ সপ্তাহে ঘোষণা করা হলেও পুরষ্কার হাতে তুলে দেয়া হবে ডিসেম্বর মাসের ১০ তারিখে। সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে সে অনুষ্ঠান হয়। পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ইরান, রাশিয়া এবং বেলারুশকে আমন্ত্রণ জানানো হবে – এ বক্তব্যের মাধ্যমে চলতি বছর নোবেল ফাউন্ডেশন একটি বিতর্কের সূত্রপাত করেছিল। গত বছর এ তিনটি দেশকে বাদ দেয়া হয়েছিল। এরপর নোবেল ফাউন্ডেশন তার সে কথা থেকে সরে আসে এবং এই তিনটি দেশকে আমন্ত্রণ না জানানোর বিষয়টি উল্লেখ করে। তবে নরওয়ের রাজধানী অসলো -তে যে অনুষ্ঠান হবে সেখানে সব রাষ্ট্রদূতকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। নোবেল শান্তি পুরষ্কার হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ইরান, রাশিয়া এবং বেলারুশের রাষ্ট্রদূতদের আমন্ত্রণ জানাবে।
সংযোগ সূত্র- বিবিসি বাংলা,নিউইয়র্ক টাইমস ও দৈনিক প্রথম আলো/প্র:০৭-১০-২০২৩/আ:স:বি:/জ:নি:
পাঠকের মন্তব্য