শিক্ষা সংযোগ / জনসংযোগ .কম / ২২-০৭-২০২০
২০১৭ সালে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি কর্তৃক আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জঙ্গীবাদ ও বর্তমান প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার উপড় একটি যুগান্তকারী বক্তব্য প্রদান করেন- দেশের কিংবদন্তী অভিনেতা ও আওয়ামী বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ জনাব আসাদুজ্জামান নূর (এম,পি) ।জনসংযোগ নিউজের শিক্ষা বিভাগের পক্ষ থেকে দেশের সকল শিক্ষার্থী ও অভিবাবক সহ জনসংযোগ পাঠকদের জন্য উক্ত বক্তব্যের পুরোটাই তুলে ধরা হল । সে সময় গুলশানে হলি আর্টিজানের জঙ্গি হামলাটি ছিল বেশ আলোচিত ও সার্বজনীন নিন্দিত । তাই তিনি জঙ্গীবাদ প্রসঙ্গ নিয়েই সেই বিখ্যাত বক্তব্যের সূচনা করেন । আশাকরি জঙ্গিবাদ ও শিক্ষা বিষয়ক দুই খন্ডের এই মটিভেশনাল বক্তব্যটি প্রচলিত সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তনে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে - আজ প্রকাশিত হলো এর ( প্রথম খন্ড )
। আসাদুজ্জামান নূর ।
শুরুতেই জঙ্গীবাদের প্রসঙ্গ টানছি । তারা দায়িত্ব নিয়েছে কাফের মারার । কথা হচ্ছে- ইসলামে পড়েছি যে আল্লাহর পক্ষ থেকে নবী রাসুলদের ইসলাম প্রচারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কিন্তু কাফের মারার দায়িত্ব-ত তাদের দেয়া হয়নি । আমি আরও পড়েছি যে রাসুল (সা:) যখন মক্কা বিজয় করে ফিরছিলেন তখন এক সাহাবী পতাকা হাতে উত্তেজিত হয়ে বলেছিলেন ইয়া রাসুল্লাহ আমরা এখন সব খতম করে ফেলব । সাধারণত বিজয়ের পর উত্তেজনা থাকবে এটাই স্বাভাবিক, আমরাও মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হয়ে ফিরছিলাম তখন আমাদের মধ্যেও উত্তেজনা ছিল এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ কিছু অঘটনও ঘটিয়েছে । যাইহোক রাসুল (সা:) তখন তাকে বললেন- আমরা এখন খতম করার জন্য যাচ্ছিনা আমরা যাচ্ছি মহব্বতের জন্য, ভালবাসার জন্য । তখন কিন্তু সেই সাহাবীর হাত থেকে বিজয়ের পতাকা কেড়ে নেয়া হয়েছিল, তার এই উক্তির জন্য, শাস্তি হিসেবে । আমি খুব ছোট মানুষ, এ নিয়ে দীর্ঘ বক্তব্য দেয়ার কোন সুযোগ আমার নেই, কিন্তু আমি আমার মত করে যতটুকু বুঝি- আমি যদি এই ছেলেগুলোকে কাছে পেতাম তাহলে জিজ্ঞেস করতাম, তোমাদের ভিতর ত আইএস আইএস বিষয়টি চালু হয়েছে, ত এদের ঘাঁটি হলো সিরিয়ার একটা অংশে । এরা হাজার হাজার মাইল দূরে গিয়ে জার্মানিতে বোমা ফাটায়, ওরা ফ্রান্সে গিয়ে ট্রাক চাপিয়ে দেয়, ওরা বাংলাদেশ সহ বেলজিয়াম, আমেরিকা, ইংল্যান্ডে গিয়ে বোমা ফাটায়, এমনকি তারা কিছুদিন আগে পাকিস্তানের একটি হাসপাতালে যেখানে হাজার হাজার অসুস্থ মানুষ চিকিৎসারত আছে সেখানে বোমা মেরে বহু অসুস্থ মানুষ মেরেছে । আমার কথা হচ্ছে- তোমাদের দেশ থেকে মাত্র পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে হল ইসরাইল । ইসরাইলকে আমরা বলি ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু ; ত তুমি পঞ্চাশ মাইল দূরে গিয়ে ইসরাইলে একটা বোমা ফাটাওনা কেন ? এই জন্যই আমি আইএস মানে কিন্তু ইসলামিক ষ্টেট বলিনা, আমি আইএস বলতে বুঝি- ইসরাইল ষ্টেট । এরা সারা পৃথিবীতে ইসলামের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এই কাজগুলো করছে । আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ বিদেশে কাজ করেন ফলে বিদেশে তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে, ভিসা বন্ধ হয়ে যাবে, এটাইত তারা চাইছেন । সুতরাং এই জঙ্গীবাদকে আমাদের বিশ্লেষন করতে হবে বিভিন্ন দিক থেকে, একটি দিক থেকে বিশ্লেষন করলে হবেনা । সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো যারা এই কাজগুলো করছে তারা আমাদেরই কোন না কোন পরিবারের সন্তান , সেখানে মাদ্রাসার ছাত্র আছে নাকি ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্র আছে সেটা বিবেচ্য বিষয়না । বিবেচ্য বিষয় হলো ধান-ত সেই জমিতেই হয় যেটা ধানের উপযোগী এবং সেই আবহাওয়াটাও থাকতে হবে তানাহলে ত ধান হবেনা ; প্রশ্ন হলো- এই ক্ষেত্রটা কারা তৈরি করছে ? এই আবহাওয়াটা কারা তৈরি করছে ? সেটা জানা সবচেয়ে বেশী জরুরী এবং আমাদের সন্তানরা যেন সেই ভুল পথে না যায় সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে । তারা ভুল পথে কিভাবে যাচ্ছে সেটা যেমন জানা দরকার আবার কেন যাচ্ছে সেটাও জানা দরকার ।
আমাদের সন্তানদের সাথে আমাদের সম্পর্ক, আমাদের শিক্ষার সাথে আমাদের যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ । আজকাল দেখা যায় যদিও তারা ঘুম থেকে উঠতে চায়না, আরেকটু ঘুমাতে চায় তবুও সকাল সাতটা বাজতেই মায়েরা তাদের সন্তানদের ঘুম থেকে তুলে তারাহুরো করে কাঁধে এতবড় একটি ব্যাগ ঝুলিয়ে জোর করে টেনে হেচরে স্কুলে নিয়ে গিয়ে কোন মহাপন্ডিত বানাতে চাইছেন আমি তা বুঝিনা । এরপর হয়ত দূপুরের মধ্যে তারা বাসায় চলে আসে, হোম ওয়ার্ক করে আবার ঘুমোতে যায়, আর অবসর বিনোদন বলতে দেখা যায় বড়জোড় টিভি স্ক্রিনে দেখছে কার্টুন ডরিমন । এখন যদি বাচ্চারা হঠাৎ করে সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় বলে উঠে, “মা মুজে নাস্তা চাহিয়ে আবি স্কুল জানা হে” ; ত এতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা । কারন বাচ্চারা যা দেখছে তাইত শিখবে, আমরা তাদের যা শিখাচ্ছি তাই তারা শিখবে, এটাই স্বাভাবিক । এরপর সন্ধা হলেই আবার হোমওয়ার্ক, এরপর ডিনার কর, তারাতারি ঘুমাও, সকালে আবার স্কুল আছে, সাতটা বাঝে উঠতে হবে, আরও কত কি ! আমরা দেখছিত, আজকাল বাচ্চারা অনেকটা ফার্মের মুরগীর মতই বড় হচ্ছে । এদের জীবনে কিন্তু আকাশ, ফুল, পাখি, নদী, মানুষ কিছুই নেই । এরা পরর্তীতে যখন আরও একটু বড় হবে তখন শুরু হবে আরও বড় যন্ত্রনা, যেটার নাম আমি দিয়েছি GPA -5 নির্যাতন । মনে হয় জিপিএ-৫ না পেলে জীবনটাই বৃথা । শুধু বইয়ের পাতা মুখস্ত করছে আর জিপিএ-৫ এর পিছনে ঘুরতে ঘুরতে আর পরীক্ষা পরীক্ষা করতে করতে জীবনটা পৃষ্ট হয়ে যাচ্ছে । তাই এ প্রসঙ্গে আমি অনেকবার বলেছি যে, এই দেশে এখন পরীক্ষার্থী আছে শিক্ষার্থী নেই । সবাই শুধু পরীক্ষা দিতে চাইছে, জিপিএ -৫ পেতে চাইছে, সবাই ফাষ্ট হতে চাইছে, সবাই ব্যস্ত এসব নিয়ে, তাহলে সংস্কৃতি কোথায় ? মানুষ কোথায় ? জীবনবোধ কোথায় ? আমার বাড়ির পাশের মানুষটি খেয়ে আছে নাকি না খেয়ে আছে আমি তা দেখছিনাতো, আরেক বাড়ীর ছেলে বড়কে গেছে বা মাদকাসক্ত হচ্ছে তাতে আমার কি যায় আসে ? আমি আমার ছেলেকে কোনক্রমে ধরে রাখছি । এই হচ্ছে আমাদের বর্তমান অবস্থা । আসলে আমরা যেভাবে আমাদের সন্তানদের মানুষ করছি আমার নিজের মনে হয় এটা ঠিকনা । ভাল রেজাল্ট করতে হবে, লেখাপড়া করতে হবে, নিষ্চই তা করতে হবে । আমি অনেক বাবা মাকে বলেছি আপনার সন্তানকে আপনারা গল্পের বই পড়তে দেন, কবিতার বই পড়তে দেন, এছাড়াও এ্যডভেঞ্চার, গোয়েন্দা কাহিনী, ইতিহাস, জীবন কাহিনী, এগুলো পড়তে দেন, শিক্ষনীয় নাটক, মুভি দেথতে দেন । এগুলো যত পড়বে, যত দেখবে তাদের মস্তিস্ক তত সতেজ এবং সজীব হবে । নিয়মিত এসবের চর্চা থাকলে যে পড়াটা বুঝতে তার তিন ঘন্টা লাগত সেটা বুঝতে তার খুব বেশী হলে ত্রিশ মিনিট লাগবে । এভাবে শুধু পাঠ্যবই এর পাতা পড়তে পড়তে তারা ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে, তাদের মস্তিষ্ক শুকিয়ে যাচ্ছে । এই ক্লান্ত মস্তিষ্ক নিয়েত কেউ ভাল ছাত্র হতে পারেনা, একথাটাই আজকাল গার্ডিয়ানরা বুঝতে চায়না ।
চলবে ————————
(দ্বিতীয় খন্ডে থাকছে একজন শিক্ষিত মায়ের গল্প ও জিপিএ-৫ এর কল্পকথা )
প্রকাশিত হবে আগামীকাল ২৩-০৭-২০২০ তারিখে । ধন্যবাদ ।
। অনু লেখক - এম আনিছুর রহমান ।
jsongjugnews@gmail.com
fb.com - @jshongjog
পাঠকের মন্তব্য