মন্তব্য প্রতিবেদন / জনসংযোগ.কম / ১০-০১-২০২১
। এম আনিছুর রহমান ।
ওপার বাংলার বিখ্যাত জীবনমুখী শিল্পী নচিকেতা তার একটি পলিটিকেল গানের মাধ্যমে বলেছিলেন- “ আমি মুখ্যু-সুখ্যু মানুষবাবু কিছুই জানিনা আর এইদেশের এই রঙতামাসা কিছুই বুঝিনা, আজকে যিনি দক্ষিণেতে কালকে তিনি বামের, আজকে যিনি তেরঙ্গাতে কাল ভক্ত রামের ; মিউজিকেল চেয়ার বানিয়ে ফেলছে আরকি ! যে যেখানে পারছে বসে পড়ছে, চেয়ার খালি হলেই হল, কোন চেয়ার ! কেমন চেয়ার তা দেখাটা মূল বিষয় নয় ’’ । আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি যাকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রপতি বলা চলে ; যার কোন দোষ ধরাটা পানির মাঝে পানি দিয়ে পানি লেখার চেয়েও কঠিন । তিনি প্রায়ই তার বক্তব্যে আক্ষেপ করে বলেন “ আমার বক্তব্য লেখাই থাকে, আমার উর্ধতন কর্মকর্তারা কি লিখে দেন মাঝে মাঝে তা রিডিং দিয়ে পাঠ করারও সময় হয়না অনেক সময়, তবুও লেখার বাহিরে জন-চাহিদার কারনে প্রায়ই আমাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলতে হয় । কথা বললেও সমস্যা, কতরকমই-ত কথা আছে, যেমন আ-কথা, কু-কথা আরও কত রকমের কথা, কথার কোন শেষ নাই । তাই কথা বললেই হলনা, কথা বলতে হয় ভেবেচিন্তে ; বলার পরে ভাবনা চিন্তা করাটা কোন ভাল লক্ষণ নয় ”।
বলছিলাম মিউজিকেল চেয়ার ও আ-কথা, কু-কথা নিয়ে । নগর ভবনের মেয়রের চেয়ারটি ছিল নগর পিতার চেয়ার কিন্তু বর্তমান ও সাবেক মেয়র মহোদয়ের একে অপরের মাঝে কাদা ছুড়াছুড়ি দেখে মনে হচ্ছে চেয়ারটি এখন একটি মিউজিকেল চেয়ার আর উভয়েরই কথাবার্তার ধরন-এ আ-কথার চেয়ে কু-কথারই প্রাধান্য পাওয়া যাচ্ছে বেশীরভাগ । সাবেক মেয়র কতটুকু দূর্ণীতি করেছেন আর বর্তমান মেয়র কতটুকু দূর্ণীতি করার জন্য পা বাড়াচ্ছেন তা জনসম্মুখে বলার জন্য সচেতন নাগরিকগণের পাশাপাশি আছেন সাংবাদিক ও সমালোচকগণ ; দৃশ্যমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে দেখা যায় তারা তাদের দায়িত্ব ঝড়োবেগেই পালন করছেন । যদি সরকার বা দলীয় ভাবমূর্তির কথা বিবেচনা করা হয় তাহলে তারা উভয়েই ভুল করছেন বা ভুল পথে হাটছেন ।
মতবাদ প্রকাশের স্বাধীনতা থাকলেও অন্তত এইসকল ক্ষেত্রে তাদের উভয়েরই উচিত ছিল ঘরোয়া বা অফিসিয়াল মিটিংয়ে এগুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বা দেশরত্নের কাছে তুলে ধরা তাহলে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপে চার দেয়ালের মাঝেই উভয়েরই ভুল সংশোধন হয়ে যেত এবং তারা আবার বাহিরে এসে কাধে কাধ মিলিয়ে নিজেদেরকে জনগণের সেবায় বিলিয়ে দিতে পারতেন, তখন তাদের কথাগুলো হত আ-কথা কিন্তু এভাবে বলাতে হয়ে যাচ্ছে কু-কথা ।
একথা অনস্বীকার্যে সত্য যে, তাদের এধরনের আত্নঘাতী পদক্ষেপের প্রধান উদ্দেশ্যই কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজেকে বা নিজেদেরকে নিষ্পাপ বা নির্মল প্রমাণ করা, যেন সাবেক আবার বর্তমান হয়ে যান বা বর্তমান যেন সাবেকের চেয়েও দীর্ঘমেয়াদী হন । রাজনীতির এই সাপলুডু খেলাটা আজকাল দেশের সবাই বুঝেন কারন দেশনেত্রীর বিভিন্ন মহিয়সী উদ্যোগে বাঙ্গালী আজ প্রায় শতভাগ শিক্ষিত হওয়ার পথে । এগুলো ভুলে গেলে হবেনা বরং এভাবে বললে বা চললে তাদের প্রতি জনগণের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি না পেয়ে তারা আরও জন-হাস্যরসে পরিণত হবেন, ইতিমধ্যে হয়েও গেছেন । ক্ষমতার লেলীহান শিখায় প্রজ্জলিত হয়ে তারা ভুলেই গেছেন যে, তারা উভয়েই দেশরত্নের একান্ত সহযোদ্ধা, তারা এক মন ও এক প্রাণ । উভয়েই আরও ভুলে গেছেন যে, তারা দুজনেই বাবার ছেলে । গোপালভারের কথায় বলতে গেলে ; যাদের পিতৃ পরিচয় তেমন উল্লেখযোগ্য থাকেনা তারা আব্বার ছেলে বা মেয়ে কিন্তু যাদের পিতৃ পরিচয় থাকে জাতীয় পর্যায়ের তারা হলেন বাবার ছেলে বা মেয়ে । গোপালভারের তথ্যচিত্র দিয়ে বিবেচনা করলেও তাদের বর্তমান কর্মকান্ডে মনে হচ্ছে তারা উভয়েই বাবার নয় আব্বার ছেলেপুলে ।
পরিশেষে বলতেই হচ্ছে- উদ্দেশ্যই যদি হয় প্রধানমন্ত্রীর বা দেশরত্নের সন্তুষ্টি লাভ করা সেক্ষেত্রে সরাসরি এসব বিষয় নিয়ে তার সাথে আলোচনা করলেই হয়, ঝামেলা মিটে যায় ; শুধু শুধু জনগণের আদালতে তথা নিরুপায় জজ সাহেবদের আদালতে বিচার দিয়ে লাভ কি ? কোন লাভ নেই কারন সময়ের অহর্নিশ ঘুর্ণিপাকে দিশেহারা নিরুপায় জজ সাহেবরা এখন চারিদিকে যা দেখেন সবই ঠিক দেখেন, বেঠিক দেখার কোন সুযোগ নেই তবে এক সময় সেই সুযোগ তাদের হাতে ছিল, আশা করি সুখ্যাতির বিড়ম্বনা কাটিয়ে আওয়ামী লীগ এর মাধ্যমেই তা আবারও ফিরে আসবে । সেই প্রত্যাশায় শেষ করছি একটি ঠিক বলার গল্প দিয়ে –
একবার এক নির্যাতিত সূ-নারী আদালতে বখাটে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করে আদালত চলাকালীন সময় জজ সাহেবকে উদ্দেশ্য বললেন, ইউরঅনার আমার স্বামী প্রায়ই আমাকে পাশবিক নির্যাতন করে তাই নারী নির্যাতন আইনে তার কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত । জজ সাহেব তা শুনে বললেন- আপনি ঠিক বলেছেন । আসামী কাঠগড়া থেকে সূ-স্বামী বললেন- ইউরঅনার আমার স্ত্রী মিথ্যে মামলা করে ও ভিত্তিহীন বয়ান দিয়ে এই মহান আদালতকে অবমাননা করেছেন, তাই আদালত অবমাননার জন্য আমার স্ত্রীর দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি হওয়া উচিত । জজ সাহেব তার বক্তব্য শুনে বললেন- আপনি ঠিক বলেছেন । সঙ্গে সঙ্গে একজন নিরপেক্ষ এ্যাডভোকেট দাঁড়িয়ে বললেন- ইউরঅনার একইসাথে বাদী বিবাদী উভয়েই ঠিক বলতে পারেনা । সময়ের নিরুপায় জজ সাহেব তাকেও উদ্দেশ্য করে বললেন- জ্বি জ্বি আপনিও ঠিক বলেছেন । এইদিক বিবেচনায় নিরুপায় জজ সাহেবের আদালতে সাঈদ তাপস উভয়েই ঠিক বলেছেন । তাদের সাথে এবার নতুন করে যোগ হয়েছেন আরেক বিপ্লবী মেয়র জনাব আব্দুল কাদের মির্জা, যিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের অনুজ । আশাকরি তিনিও ঠিক বলেছেন । বিষয়টি নিয়ে বিব্রত ও মর্মাহত হয়ে জনাব ওবায়দুল কাদের বললেন শেখ হাসিনা ছাড়া দলে কেউ অপরিহার্য নয় । ধরে নিলাম তিনিও ঠিকই বলেছেন । তবে দলের নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে স্বয়ং শেখ হাসিনা নিজেকেই নিজে দলের একমাত্র অপরিহার্য আদৌ কখনও ভেবেছেন কিনা তা এবার ভেবে দেখার বিষয় বটে । ধন্যবাদ ।
জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয়তু শেখ হাসিনা ।
Email- desk@prnews1.com / jonosongjognews@gmail.com
fb.com- @prnews1.com.bd
পাঠকের মন্তব্য