জনসংযোগ প্রতিবেদন-তথ্য প্রযুক্তি/হোয়াইটস্অ্যাপ/সূত্র- বিবিসি বাংলা, আনন্দবাজার পত্রিকা এবং দৈনিক প্রথম আলো/১৯জানুয়ারি,২০২১
তথ্য প্রযুক্তি ডেস্ক । জনসংযোগ.কম
অবশেষে স্বিদ্ধান্ত পরিবর্তনে হোয়াটস্অ্যাপ কর্তৃপক্ষ। ৮ফেব্রুয়ারি,২০২১ তারিখ থেকে যে পলিসি চালু করার কথা ছিল, তা মে মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত পিছিয়ে দিল এই মেসেজিং অ্যাপ। তাদের পলিসি-গত পরিবর্তন নিয়ে বহু ধরনের ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে বলেও, দাবি করা হয়েছে হোয়াটস্অ্যাপের তরফে। বলা হয়েছে, তারা ব্যবহারকারীদের আরও স্বচ্ছ্ব ভাবে বিষয়টা বুঝিয়ে বলবে। তার জন্য যেমন এর আগে বিজ্ঞাপন দিয়েছে সংস্থাটি, তেমনই রবিবার নিজেরাই স্টেটাস দিয়ে আরও একবার অভয় দিল ব্যবহারকারীদের। জানুয়ারির গোড়ায় নীতিগত বদলের কথা তারা জানায়। একই সঙ্গে জানানো হয়, ফেব্রুয়ারি মাসের ৮ তারিখ থেকে নতুন পলিসি মেনে চলবে হোয়াটস্অ্যাপ। যে সব ব্যবহারকারীরা এই নতুন পলিসির সঙ্গে একমত হবেন না, ফেব্রুয়ারি থেকে তাদের হোয়াটস্অ্যাপ অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাবে। সেই সিদ্ধান্ত থেকেই আপাতত পিছিয়ে এল তারা।
হোয়াটসঅ্যাপের পলিসি সংক্রান্ত বিতর্কের কারণে দ্রুত হারে বাড়ছে সিগন্যাল অ্যাপের ব্যবহার। আচমকা বেড়ে যাওয়া ব্যবহারকারীর বিপুল চাপ সিগন্যালের সার্ভার কতটা সামলাতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিলই। সেই আশঙ্কাকেই সত্যি প্রমাণ করে শুক্রবার রাত থেকেই গতি কমে গিয়েছে এই অ্যাপের। বহু ব্যবহারকারী জানিয়েছেন, তাঁদের মেসেজ ঠিক সময়ে যাচ্ছে না। সিগন্যালের তরফেও মেনে নেওয়া হয়েছে এই অভিযোগ। তারা জানিয়েছে, খুব দ্রুত এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
১৭জানুয়ারি হোয়াটসঅ্যাপের নিজেদের অ্যাকাউন্ট থেকে ‘স্ট্যাটাস’ দিয়ে জানাল, আপনার গোপনীয়তা রক্ষা করতে তারা দায়বদ্ধ। অনেক হোয়াটস্অ্যাপ ব্যবহারকারীই রবিবার সকালে নিজের হোয়াটস্অ্যাপে চোখ বুলিয়ে খানিক অবাক হয়ে যান। কারণ, ‘স্টেটাস’ দিয়েছে তাঁদের পরিচিত কোনও বন্ধু বা আত্মীয় নয়, খোদ হোয়াটসঅ্যাপ। এই স্টেটাসে ৪টি বক্তব্য রাখা হয়েছে তাদের ব্যবহারকারীদের কাছে। বলা হয়েছে, ‘আমরা আপনার গোপনীয়তা রক্ষা করতে দায়বদ্ধ’, ‘এন্ড-টু-এন্ড ইনক্রিপশন আছে বলে, হোয়াটস্অ্যাপ আপনার ব্যক্তিগত কথাবার্তা পড়তে বা শুনতে পায় না’, ‘হোয়াটস্অ্যাপ আপনার শেয়ার করা লোকেশন দেখতে পায় না’ এবং ‘হোয়াটস্অ্যাপ আপনার কনট্যাক্টস ফেসবুককে জানায় না’। সূত্র- আনন্দবাজার পত্রিকা ।
গত ১১জানুয়ারি,২০২১ তারিখে দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত অন্য আরেকটি খবর থেকে জানা যায় যে হোয়াটস্অ্যাপ ব্যবহার করতে হলে এখন ফেসবুকের সঙ্গে তথ্য শেয়ারের অনুমতি দিতে হবে। তা না হলে হোয়াট্অ্যাপ মুছে ফেলতে হবে বলে শর্ত দিয়েছে হোয়াটস্অ্যাপ কর্তৃপক্ষ। ফেসবুককে তথ্য দিতে বাধ্য করার বিষয়টি নিয়ে অনেকেই অনলাইনে হোয়াটস্অ্যাপের সমালোচনা করছেন। বিষয়টি পরিষ্কার করে আনুষ্ঠানিক এক বিবৃতি দিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ।
হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন নীতিমালায় তাদের ফেসবুকের সঙ্গে তথ্য শেয়ার করার যে চর্চা, তাতে কোনো পরিবর্তন আসছে না। আগামী মাস থেকে এ নীতিমালা কার্যকর হবে। এতে কেবল বিজনেস অ্যাকাউন্টগুলো লক্ষ্য থেকে তথ্য শেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে গ্রাহকের চ্যাটের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন দেখা যাবে না। অর্থাৎ, এতে বিজনেস অ্যাকাউন্ট বাদে সাধারণ ব্যবহারকারী কোনো পরিবর্তন লক্ষ করবেন না। হোয়াটস্অ্যাপ ব্যবহারকারী ব্যবসায় যুক্ত অ্যাকাউন্টগুলোর সঙ্গে কথা বলবেন কি না, তা নির্ধারণ করতে পারবেন।
তবে গত ১৫জানুয়ারি একটি ইউটিউব বার্তায় বিবিসি বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদক আকবর হোসেন জানিয়েছেন এ সম্পর্কে আরও উল্লেখযোগ্য কিছু তথ্য । তিনি জানান ফেসবুক কর্তৃপক্ষ চাচ্ছে, হোয়াটস্অ্যাপ ব্যবহারকারীদের কিছু তথ্য শেয়ার করতে হবে। এসব তথ্য শেয়ার না করলে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করা যাবে না। সেজন্যই ব্যবহারকারীদের তথ্য দিতে বাধ্য করছে হোয়াটস্অ্যাপ। হোয়াটস্অ্যাপ কেন এটা করলো? কী ধরনের তথ্য দিতে হবে? আর এতে উদ্বেগের কারণ আছে কতটা –
আকবর হোসেনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী হোয়াটস্অ্যাপ এর মালিক হচ্ছে ফেসবুক তাই এর কর্তৃপক্ষ চাইছে এই এ্যাপ ব্যবহারকারীদের কিছু তথ্য শেয়ার করতে হবে অন্যথায় তারা হোয়াটস্অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেনা তবে এই নিয়ম বৃটেন সহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। যেসকল তথ্য দিতে হবে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- [১] ব্যবহারকারীর নাম [২] ফোন নাম্বার [৩] ব্যবহারকারীর ফোন সেট সংক্রান্ত তথ্য অর্থাৎ কোন কোম্পানির মোবাইল সেট এবং এর মডেল সম্পর্কে [৪] আইপি এড্রেস অর্থাৎ কোন ইন্টারনেট ব্যবহার করছে সে সম্পর্কে তথ্য প্রদান [৫] হোয়াটস্অ্যাপ ব্যবহার করে কোন আর্থিক লেনদেন যদি থাকে সে তথ্যও দিতে হবে । শুধুমাত্র এই এ্যাপ ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা নতুন এই নিয়মের আওতায় আসবে। বিশেষকরে যেসকল ব্যবসায়ীরা যোগাযোগ বা পণ্যের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে তাদেরকে এই নতুন এই নিয়ম ফলো করতে হবে। ধরাযাক কোন ব্যবসায়ী বাইসাইকেল ক্রয়/বিক্রয়ের এর বিজ্ঞাপন দিয়েছে এবং যোগাযোগের জন্য হোয়াটস্অ্যাপ ব্যবহার করছে। যদি এ বিষয়ে হোয়াটস্অ্যাপ কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য থাকে তাহলে কেউ যখন ফেসবুকে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন দেখবে তখন তার কাছে বাইসাইকেল সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনই বেশী আসতে থাকবে এটিই ধরে নিবে ফেসবুক । নিজের আত্নীয় স্বজন বা বন্ধু বান্ধবদের সাথে কথা বলা বা মেসেজ আদান প্রদান করা আর ব্যবসায়িক প্রয়োজনে সেগুলো করা এক বিষয় নয়। অনেক ব্যবসায়ী আছে যারা হোয়াইট্সএ্যাপের মাধ্যমে কাষ্টমারদের সাথে মেসেজ আদান প্রদানের মাধ্যমে ব্যবসায়িক প্রমোশন বা ব্রান্ডিং করে থাকে। এধরনের মেসেজ আদান প্রদান হলে জানতে পারবে ফেসবুক তবে সেক্ষেত্রে কোন তথ্যগুলো শেয়ার করা হচ্ছে তা ব্যবহারকারীদের জানিয়ে রাখবে ফেসবুক ।
হোয়াটস্অ্যাপের নতুন নিয়ম নিয়ে উদ্বিগ্ন অনেকেই ভিন্ন অ্যাপস্ ব্যবহারের বিষয়ে চিন্তা করছে। সেক্ষেত্রে সিগনাল এবং টেলিগ্রাম অনেকের পছন্দের তালিকায় যুক্ত হয়েছে। হোয়াটস্অ্যাপের নতুন নিয়ম ঘোষনার পর সিগনাল এবং টেলিগ্রাম ডাউনলোডের হিড়িক পরে গেছে। ডাটা বিশ্লেষন প্রতিষ্ঠান সেন্সর টাওয়ারের হিসাব মতে হোয়াইট্সঅ্যাপের নতুন নিয়ম ঘোষনার আগে সিগনাল এবং টেলিগ্রাম ডাউনলোডের পরিমাণ ছিল দুই লক্ষ ছয়চল্লিশ হাজার বার অন্যদিকে হোয়াইট্সঅ্যাপের ঘোষনার পরে গত এক সপ্তাহে এ হিসেব দাঁড়িয়েছে আটাশি লক্ষ তে। সিগনাল বেশী ডাউনলোড হয়েছে ভারতে, সেখানে বার হাজার থেকে বেড়ে সাতাশ লক্ষ হয়েছে। যোগাযোগের অ্যাপস্ গুলোর মধ্যে এসময়ে সবচেয়ে বেশী ডাউনলোড হয়েছে টেলিগ্রাম। এক সপ্তাহের মধ্যে এটি ডাউনলোড হয়েছে পঁয়তাল্লিশ লক্ষ বার। অন্যদিকে হোয়াটস্অ্যাপ ডাউনলোড এই সময়ের মধ্যে দুই মিলিয়ন বা প্রায় বিশ লক্ষের মত কমে গেছে তবুও ব্যবহারকারীদের মধ্যে হোয়াটস্অ্যাপ একটি জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবেই থাকবে বলে মনে করছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। যারা উদ্দেশ্যে অসৎ একমাত্র তাদের জন্যই হোয়াটস্অ্যাপের নতুন নিয়ম উদ্বেগের কারন হতে পারে।
গত ১০জানুয়ারি,২০২১ – ১৯জানুয়ারি,২০২১ পর্যন্ত বিবিসি বাংলা, দৈনিক প্রথম আলো ও আনন্দবাজার পত্রিকায় হোয়াটস্অ্যাপের নতুন নিয়ম প্রসঙ্গে প্রকাশিত বিভিন্ন খবর পর্যালোচনা করে এই প্রতিবেদনটি জনসংযোগ.কমের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ থেকে প্রকাশ করা হল।
jsongjugnews@gmail.com / fb.com- @jshongjog
পাঠকের মন্তব্য